স্বদেশ ডেস্ক ॥
‘আমি রোজাদার, আমাকে ইফতার পর্যন্ত প্রাণ ভিক্ষা দাও, প্লিজ তোমাদের পায়ে পড়ি। মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও।’-এমন করে আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তির। ইফতার কেনার সময় জনসম্মুখে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোরশেদ মারা যান। তিনি সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে।
নিহতের ভাই জয়নাল আবেদীন ও আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ভাই মোরশেদ ইফতার সামগ্রী কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে এরশাদ আলীর ওপর হামলা চালায়। আকস্মিক হামলা ও রোজায় ক্লান্ত হয়ে মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
হামলার সময় মোরশেদ হামলাকারীদের বলছিলেন, সারাদিনের রোজায় বেশি ক্লান্ত, মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। এরপরও তারা মোরশেদকে মাটিতে ফেলে মারধর ও কুপিয়ে চলে যান, যোগ করেন নিহতের ভাই ও আইনজীবী।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল মোরশেদের পরিবার। সেই সেচ প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোরশেদ আলীর বিরোধ চলছিল। হামলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলে আসছিল।
কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারও আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষ। সেই থেকে তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল ওই চক্রটি, বলেন স্থানীয়রা।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হামলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।
তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা আলাল, আবদুল মালেকসহ অন্যান্যরা পলাতক থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গিয়াস বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টিম। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।